প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত শরদিন্দুবাবুর ঐতিহাসিক গল্পের কালপ্রসার। এর মধ্যে কোথাও গল্পের পরিবেশ গল্প রসের তীক্ষ্ণতার হানি করেননি।
দূরের দৃশ্যপটকে নিকটে এনে দূরের মানুষকে কাছের মানুষ করতে পেরেছেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে তিনি ছিলেন সার্থক ও সতর্ক স্রষ্টা।
এক সাক্ষাৎকারে শরদিন্দু বলেছিলেন ইতিহাস থেকে চরিত্রগুলো কেবল নিয়েছি কিন্তু গল্প আমার নিজের। সর্বদা লক্ষ্য রেখে রেখেই কি করে সেই সেই যুগকে ফুটিয়ে তোলা যায়। যে সময়ের গল্প সে সময়ের রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, অস্ত্র, আহার, বাড়িঘর ইত্যাদি খুঁটিনাটি সব জানা না থাকলে যুগকে ফুটিয়ে তোলা যায় না। এরপর আস্তে ভাষা। ঐতিহাসিক গল্পের ভাষাও হবে যুগোপযোগী।
রহস্যসন্ধানী ব্যোমকেশ বক্সীর অমরস্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতিহাস-আশ্রিত গল্প-উপন্যাসে কাহিনী ও ইতিহাস যুগপৎ ‘জীবন্ত’ হয়ে উঠেছে। বৌদ্ধযুগ, গৌড়বঙ্গ, চৈতন্যযুগ,প্রাক-মুঘল কিংবা মুঘল যুগ অথবা অদূর অতীতের পর্তুগিজ-ইংরেজ অধিকৃত বাংলার সমকাল দুর্নিবার হয়ে উঠেছে কল্পনা ও বর্ণনার অশেষ গুনে, রচনা ও গল্পরসের অনিবার্য সৃষ্টিতে। তিনি বলতেন ইতিহাসের গল্প লিখেই বেশী তৃপ্তি পেয়েছি।
পরিশ্রমী সম্পাদনায় দুই মলাটের মধ্যে সাজিয়ে দেয়া শরদিন্দুর সমস্ত ইতিহাস-নির্ভর উপন্যাস ও গল্প পাঠকদেরও তৃপ্তি দেবে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।